দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবসা ঊর্ধ্বমুখী
পোলিশ সরকারের সঙ্গে গত বছর ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রয় চুক্তি করেছিল দক্ষিণ কোরিয়া। এ চুক্তিকে দেশটির প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবসার ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর থেকে রাশিয়ার কাছ থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনা বন্ধ করে দিয়েছে ইউরোপ ও এশিয়ার দেশগুলো। এ সুযোগে দক্ষিণ কোরিয়া হয়ে উঠেছে বিকল্প প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবসার নতুন কেন্দ্র।
উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের জন্য দশকের পর দশক ধরে যে প্রস্তুতি দক্ষিণ কোরিয়া নিয়েছে, তা দেশটিকে ক্রমে শীর্ষ ১০ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রফতানির কাতারে নিয়ে গেছে। আর্টিলারি উৎপাদনকারী হানওয়া অ্যারোস্পেস, ট্যাংক উৎপাদনকারী হুন্দাই রোটেম ও ফাইটার জেট উৎপাদনকারী কোরিয়া অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ বিশ্বজুড়ে ব্যবসা প্রসারিত করছে।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুসারে, দক্ষিণ কোরিয়া ২০২২ সালে বিশ্বের নবম শীর্ষ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রেতার অবস্থানে উঠে এসেছে। অথচ ২০০০ সালে দেশটির অবস্থান ছিল ৩১তম।
হানওয়া অ্যারোস্পেস কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়া আগ্রাসন শুরুর পর থেকে পশ্চিমা দেশগুলো প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করেছে। বিনিয়োগকারীরা আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোর দিকে নজর দিয়েছেন। হানওয়া অ্যারোস্পেসের ব্যবসা বর্তমানে দ্বিগুণ হয়েছে।
হানওয়া অ্যারোস্পেসের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট কিম দায়ে-ইয়ুং বলেন, ‘আমরা পৃথিবীর হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানির একটি, যারা দ্রুত ও চাহিদা মতো প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করতে সক্ষম। আমরা বৈশ্বিক প্রতিরক্ষা শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠছি। বিশেষ করে যেসব দেশে প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের জরুরি চাহিদা রয়েছে, সেখানে আমরা ব্যবসার মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা করতে পারছি।’
পশ্চিমা অস্ত্রপ্রস্তুতকারী কোম্পানির তুলনায় দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানিগুলো সামরিক সরঞ্জাম তৈরিতে দক্ষতা দেখাচ্ছে। এরা সাধারণত সাশ্রয়ী মূল্যে ট্যাংক, কামান ও ছোট ফাইটার জেট তৈরি করতে পারে।
কোরিয়ান সরকারও রফতানিকারকদের সহায়তা করে থাকে। অর্ডার নেয়া, চাহিদা অনুযায়ী প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরি ও সরবরাহ করার ক্ষেত্রে এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকে।
কোরিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজির একজন বিশ্লেষক মুন সিওং মুক বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা এখন দ্রুত ও মানসম্পন্ন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরিতে প্রস্তুত। আমাদের অধিকাংশ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম মার্কিন মানদণ্ডের ভিত্তিতে তৈরি। যাতে এগুলো পশ্চিমা ও তাদের মিত্র দেশগুলো সহজে ব্যবহার করতে পারে।’
প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রফতানি কোরিয়ার চিপ রফতানিকে ব্যাহত করছে। এটা বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছে।
কোরিয়া অ্যাসোসিয়েশন অব ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি স্টাডিসের প্রধান চে উ সেওক বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়া বাণিজ্য উদ্বৃত্তের একটি দেশ। গত বছর চিপ রফতানি হ্রাস পাওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি নীতিনির্ধারকদের কিছুটা চিন্তায় ফেলেছে। সরকার আশা করছে, এ ঘাটতি মেটাতে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রফতানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
আসান ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজের একজন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ ইয়ং উক বলেন, ‘অন্য দেশের তুলনায় প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবসায় বিনিয়োগকারী পাওয়াটা দক্ষিণ কোরিয়ায় সহজ। এছাড়া রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো সহজ শর্তে বিপুল অর্থ ঋণ দিয়ে থাকে।’
বৈশ্বিক প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবসায় সিউলের অপ্রত্যাশিত উত্থান, বিশেষ করে ইউরোপের বাজারে প্রবেশ করাটাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
Comment / Reply From
You May Also Like
নতুন সংবাদ
পড়ে দেখুন
Vote / Poll
ঈদযাত্রায় এবছর যানজট অনেকটা কম হবার কারণ কী বলে মনে করেন?