কৃষিকাজের পাশাপাশি উদ্যোক্তাও এখন ওরা
ফরিদপুর সদর উপজেলার চর মাধবদিয়া ইউনিয়ন হাফেজডাঙ্গি গ্রামের মুক্ত আক্তার (২৩) কৃষিকাজের পাশাপাশি একজন কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবেও কাজ করছেন। পাট আর সরিষার চাষ করেন তিনি। বছরে দুই বার ফসল আসে। ফসল ফলানোর বেশির ভাগ কাজ নিজেই করেন। তবে এই কাজ তিনি একা করেন না, কয়েক জন নারী কৃষক মিলে সম্মিলিতভাবেই করেন। প্রয়োজনে বর্গাচাষি নেন। ফসল তারা বাজারে বিক্রি করেন। লাভ যা হয় তা ভাগ করে নেন। আর এই লাভ সংসারে কাজে লাগিয়ে আবার মূলধন বাড়ানোর জন্য জমা করেন।
হাফেজডাঙ্গি গ্রামের পাশেই অমব্রিকাপুর ইউনিয়নের বিশ্বাসডাঙ্গি গ্রামের অন্য নারী সমবায় দলের সেলিনা বেগম জানান, তারা ২২ জন নারীচাষি মিলে একটি সমবায় সমিতি করেছেন। তারা নিজেরা চাষ করেন এবং উৎপন্ন পণ্য বাজারে বিক্রি করেন। ফরিদপুর সদর উপজেলার দুই ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামের ১৫০ জনের অধিক নারী সমবায়ের মাধ্যমে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে স্বনির্ভর। বর্তমানে তাদের সমবায়ের মূলধন দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ টাকার ওপর। শেরপুর জেলা সদরের ডুবাচর উজানপাড়া কামরের চর এলাকার একজন সফল উদ্যোক্তা ফিরোজা বেগম। শ্বশুরের দেওয়া জমিতে নার্সারি করে তিনি এ বছর ৬০ হাজার টাকার আমের চারা বিক্রি করেন। বছরে ফিরোজা দেড় লাখ টাকা লাভ করেন।
তাদের মতো দেশের অনেক প্রান্তিক নারীরা কেউ কৃষি, হস্তশিল্প আবার কেউ আইটি-নির্ভর ব্যবসা করে সফল উদ্যোক্তা। এই নারীদের জন্যই আজ ১৫ অক্টোবর পালিত হচ্ছে বিশ্ব গ্রামীণ নারী দিবস। পারিবারিক প্রতিবন্ধকতা, ঋণের জন্য চ্যালেঞ্জসহ নানা বাধা থাকলেও বসে নেই তারা। সমাজে একসময় আবির্ভূত হচ্ছেন সফল এক এক জন উদ্যোক্তা হিসেবে। এই ধরনের সম্ভাবনাময়, উদ্যোগী নারীদের জন্য আরও প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন অভিজ্ঞজনেরা।
সোমবার ১৬ অক্টোবর, ময়মনসিংহ শহরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন পার্কের বৈশাখী মঞ্চে হবে গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ‘উদ্যোগের উৎসব’। ‘আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সপ্তাহ’ উপলক্ষে এই আয়োজন করা হয়েছে। ময়মনসিংহবাসীর জন্য নিজেদের পণ্য নিয়ে আসছেন ব্র্যাকের নারী উদ্যোক্তারা। নিজেদের তৈরি পোশাক, খাদ্যসামগ্রী, আচার, হস্তশিল্প, কৃষিজ পণ্য, শো-পিস, প্রসাধনী সামগ্রীসহ নানা পণ্য নিয়ে ময়মনসিংহবাসীর সামনে হাজির হবেন তারা।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক-এর জেন্ডার ইনক্লুশন অ্যান্ড ওমেন ইন্টারপ্রেনারশিপ, মাইক্রোফিন্যান্সের সিনিয়র ম্যানেজার কাশফি বিনতে আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, মাইক্রোফিন্যান্সের অধিকাংশ ঋণগ্রহীতা নারী। তারা অনেকেই পরিবারের বাধা পেরিয়ে ভালোভাবে এগিয়ে আসছেন। সবারই মূলধনের সমস্যা ছিল। তারপরও তারা কঠোর পরিশ্রম করে, নিজেদের মেধা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তাদের সারিতে জায়গা করে নিয়েছেন। এমন ২৬ জন উদ্যোক্তাকে নিয়ে হচ্ছে ময়মনসিংহের মেলা।
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন কাজ করছে ‘জেন্ডার ইনক্লুসিভ মার্কেট সিস্টেম ফর ইম্প্রুভ নিউট্রেশন প্রজেক্ট’—জেসমিনের প্রজেক্ট ম্যানেজার অসীম চ্যার্টাজি বলেন, ২০ হাজার পরিবার নিয়ে তারা কাজ করলেও সরাসরি নারীদের তাদের প্রজেক্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেন। এসব পরিবারের ৬৭ শতাংশ নারী এখন উদ্যোক্তা। তারা কৃষিকাজ করছেন, উদ্যোক্তা হয়েছেন, সমস্ত প্রতিবন্ধকতা তারা নিজেরাই মোকাবেলা করছেন। আমরা শুধু তাদের সহযোগিতা করি। এই কাজে আমরা পরিবারের পুরুষ সদস্য, ধর্মীয় নেতাদেরও যুক্ত করি। তাদের কাজ এগিয়ে নিতে সরকারের সহযোগিতায় ঋণ গ্রহণের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ ঘটানোর কাজটিও আমরা করি। দিনের শেষে তাদের সফলতা আসে। ‘এসএমই ফাউন্ডেশনের জেনারেল ম্যানেজার ফারজানা খান জানান, একদম প্রান্তিক নারী উদ্যোক্তাদের তথ্যের অভাব আছে, পণ্যের ডিজাইন সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই, গুণমান ও দক্ষতার অভাব আছে, সেই সঙ্গে পরিবারের অসহযোগিতাও রয়েছে—এতসব প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও তারা এগিয়ে আসছেন। এসএমই ফাউন্ডেশনে দিন দিন বাড়ছে গ্রামীণ নারী সদস্যের সংখ্যা। তিনি বলেন, গ্রামীণ নারীদের আরও বেশি সুযোগ দেওয়া হলে তারা সমাজ পরিবর্তনের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন।
Comment / Reply From
You May Also Like
নতুন সংবাদ
পড়ে দেখুন
Vote / Poll
ঈদযাত্রায় এবছর যানজট অনেকটা কম হবার কারণ কী বলে মনে করেন?