এবারও গুচ্ছ পদ্ধতিতেই হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতির নানা ত্রুটির কারণে এ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। পাশাপাশি এই ত্রুটির বিষয়টি আমলে নিয়ে নতুন পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে স্নাতক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ, ২০২৩-এর খসড়ার চূড়ান্ত হয়নি। ফলে আসন্ন ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষেও দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের নিয়মে তিনটি গুচ্ছে ভাগ করে ভর্তি পরীক্ষা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বক্তব্য হলো, গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি প্রক্রিয়ার সমন্বয়হীনতা ও দীর্ঘসূত্রিতা ভর্তি প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলেছে। গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিড়ম্বনা বেশি। মাইগ্রেশন বেশি থাকায় শিক্ষকেরাও এখন এই পদ্ধতি চাইছেন না। সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান না করলে গুণমানও ক্রমান্বয়ে কমতে থাকবে। গুচ্ছের প্রতিবন্ধকতাগুলো সংস্কার করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায় অনুসারে ইউজিসি সব বিশ্ববিদ্যালয়কে একক আওতাভুক্ত করে একটি ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছিল। এ বিষয়ে কমিটি গঠন করে এবং বিস্তারিত আলোচনা শেষে একটি অধ্যাদেশের খসড়াও তৈরি করেছিল। কিন্তু অনিবার্য কারণবশত আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকে একক ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে গত বছরের মতো আসন্ন শিক্ষাবর্ষেও গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এ বছর গুচ্ছভুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুচ্ছে ভর্তিতে অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব দিয়ে নজির স্থাপনের পরামর্শ দেন।
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা রাখা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০ হাজারের বেশি আসন রয়েছে। এসব শিক্ষার্থী তাদের কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ে ভর্তি হতে পারবেন না। এরকম পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তিতে পোষ্য কোটা রাখার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পোষ্য কোটা থেকে বের হয়ে আসার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন বিষয় পড়ানো হবে, ছাত্রসংখ্যা কত হবে, তা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে কমিশন এখন পরিকল্পনা করছে।
বর্তমানে দেশে ৫৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা ভর্তি পরীক্ষা হয়। তবে ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একটি গুচ্ছভুক্ত হয়, তিনটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট, কুয়েট ও রুয়েট) আরেকটি গুচ্ছে এবং কৃষি ও কৃষি শিক্ষাপ্রধান সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় অপর একটি গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে।
বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকেই বেছে নিতে হবে কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫২ জন। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯২ হাজার ৫৯৫ জন। আর জিপিএ-৪ থেকে ৫-এর নিচে পেয়েছেন ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬৮ জন। শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকা প্রায় ৪০টির মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষে আসনসংখ্যা মাত্র ৬৫ হাজারের বেশি। এছাড়া সরকারি ৪৭ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে আসন ৫ হাজার ৩৮০টি। ফলে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরাও তাদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবেন না। তবে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির সুযোগ রয়েছে তাদের। এ ক্ষেত্রে তাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে বেছে নিতে হবে। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি-বেসরকারি কলেজেও ভর্তি হতে হবে।
উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ আসন রয়েছে। ৪০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ৬৬ হাজার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে দুই বা তিন সেশনের হিসাবে প্রায় সাড়ে তিন লাখ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে ৮ লাখ ৫৮ হাজার, আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মাদ্রাসায় ৬০ হাজার, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৪৩০, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে ২৩ হাজার ৩৩০, সরকারি- বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
Comment / Reply From
You May Also Like
নতুন সংবাদ
পড়ে দেখুন
Vote / Poll
ঈদযাত্রায় এবছর যানজট অনেকটা কম হবার কারণ কী বলে মনে করেন?