উচ্চ সুদহার ও মূল্যস্ফীতিতে ধীর হচ্ছে বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়ে রেকর্ড পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আগ্রাসীভাবে সুদের হার বাড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। এ অবস্থায় বিশ্ব অর্থনীতি মন্দায় পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেক বিশ্লেষক। যদিও বিশ্ব অর্থনীতি সীমিত প্রবৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছে প্যারিসভিত্তিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি)।
ওইসিডির অনুমান, চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতি মাত্র ৩ দশমিক ১ শতাংশ প্রসারিত হবে। এ পূর্বাভাস ২০২১ সালে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে অনেক কম। তবে আগামী বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরো খারাপ হবে। ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতি মাত্র ২ দশমিক ২ শতাংশ প্রসারিত হবে।
ওইসিডি মহাসচিব ম্যাথিয়াস কোরম্যান বলেন, এটা সত্য যে আমরা বিশ্বব্যাপী মন্দার পূর্বাভাস দিচ্ছি না। তবে এটা বেশ চ্যালেঞ্জিং প্রাক্কলন। আমি মনে করি না যে ২ দশমিক ২ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস স্বস্তিদায়ক।
৩৮টি সদস্য দেশ নিয়ে গঠিত ওইসিডি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও সমৃদ্ধি নিয়ে কাজ করে এবং পর্যায়ক্রমে প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে থাকে। সংস্থাটির পরিসংখ্যান দেখায় যে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দিতে ভূমিকা পালন করেছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় সংস্থাটির সদস্য দেশগুলোর ১৮ শতাংশ জ্বালানিতে ব্যয় হচ্ছে।
ম্যাথিয়াস কোরম্যান বলেন, বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি রেকর্ড পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। অনেক দেশে পরিবারগুলোর প্রকৃত আয় দুর্বল হয়ে পড়েছে। যদিও অনেক সরকার পরিবার ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তায় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
সর্বশেষ পূর্বাভাসে ওইসিডি ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আগ্রাসীভাবে সুদের হার বাড়াচ্ছে। এরই মধ্যে চলতি বছর বেঞ্চমার্ক সুদের হার ছয়বার বাড়ানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ পদক্ষেপ বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিকে প্রায় স্থবির করে দেবে। এ কারণে চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি মাত্র ১ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়বে। যেখানে ২০২১ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া ২০২৩ ও ২০২৪ সালে দেশটির জিডিপি যথাক্রমে দশমিক ৫ ও ১ শতাংশ বাড়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
বেশির ভাগ অর্থনীতিবিদ মনে করেন, আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্র অন্তত একটি মৃদু মন্দায় প্রবেশ করবে। যদিও ওইসিডি নির্দিষ্ট করে মন্দার কথা বলেনি। প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি কিছুটা ধীর হলেও ২০২৩ ও ২০২৪ সালে সেটা ফেডারেল রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশের ওপর থাকবে।
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে ইউরো অঞ্চল। ইউরো মুদ্রা ব্যবহার করা ১৯ দেশের অর্থনীতি আগামী বছর মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ওইসিডি। ২০২৪ সালে অঞ্চলটিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। যদিও অঞ্চলটিতে মূল্যস্ফীতির চাপ উচ্চপর্যায়ে থেকে যাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। ইউরো অঞ্চলে ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) ২০২১ সালে মাত্র ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছিল। যেখানে ২০২২ ও ২০২৩ সালে সিপিআই বাড়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে যথাক্রমে ৮ দশমিক ৩ ও ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
ওইসিডি জানিয়েছে, আগামী বছরের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অন্যতম ভূমিকা রাখবে এশিয়া। অঞ্চলটির উদীয়মান বাজারগুলো দৃঢ় প্রবৃদ্ধি পাবে। যেমন ভারতের অর্থনীতি চলতি বছর ৬ দশমিক ৬ শতাংশ এবং আগামী বছর ৫ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়বে। পাশাপাশি চীনের অর্থনীতি ২০২২ ও ২০২৩ সালে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৩ ও ৪ দশমিক ৬ শতাংশ হারে প্রসারিত হবে। জিরো কভিড নীতি ও আবাসন খাতে মন্দার কারণে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ধীর হবে।
বিটি/ এমকে
Comment / Reply From
You May Also Like
নতুন সংবাদ
পড়ে দেখুন
Vote / Poll
ঈদযাত্রায় এবছর যানজট অনেকটা কম হবার কারণ কী বলে মনে করেন?